শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৫:২২ পূর্বাহ্ন
এম.কে. রানা ॥ বরিশাল নগরীতে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন করোনার নমুনা সংগ্রহ কার্যক্রম বন্ধ থাকায় অনিশ্চয়তায় পড়েছে নগরীর প্রায় ৫ লক্ষাধিক মানুষ।
করোনা মোকাবেলায় সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব থাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে করোনা মোকাবেলায় ফ্রন্টলাইনে যারা কাজ করছেন তাদের নমুনা সংগ্রহ না হওয়ায় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
এদিকে শেবাচিম হাসপাতালে করোনা টেস্ট ল্যাবটি জীবানুমুক্ত করার কারনে গত রবিবার থেকে করোনার নমুনা সংগ্রহ কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। অপরদিকে স্বাস্থ্য পরিসেবা নিশ্চিতকরণে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব লক্ষ্য করা গেছে।
বরিশালের সিভিল সার্জন জানিয়েছেন বরিশাল জেনারেল (সদর) হাসপাতালে মাত্র একজন টেকনিশিয়ান দিয়ে করোনার নমুনা সংগ্রহ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তিনি দাবী করেন, সিটি কর্পোরেশনের বাসিন্দাদের করোনা নমুনা সংগ্রহের জন্য কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের দুইজনকে তারা প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। আর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ বিষয়ে অবগত নন বলে জানিয়েছেন।
এদিকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে এ সমস্যা সমাধাণে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের তাগিদ দিয়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার। তবে বরিশাল জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।
সূত্রে জানা যায়, বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এলাকার বাসিন্দাদের করোনা নমুনা সংগ্রহ করে থাকে কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ।
এ বিভাগের দুইজন টেকনিশিয়ানকে বরিশাল সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে নমুনা সংগ্রহের জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
একটি সূত্র জানায়, নমুনা সংগ্রহ করতে গিয়ে তারা দুইজনই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ফলে বর্তমানে সিটি এলাকার বাসিন্দাদের নমুনা সংগ্রহ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ মতিউর রহমানের মুঠোফোনে (০১৭১১ … ৩৮) একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
পরবর্তীতে সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইসরাইল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, নমুনা সংগ্রহ বন্ধ রয়েছে কিনা তা তিনি অবগত নন। বিষয়টি তাকে কেউ জানাননি জানিয়ে তিনি স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করার জন্য বলেন।
গতকাল সোমবার ৮ জুন পর্যন্ত বরিশাল জেলায় ৬৭৪ জনের করোনা পজিটিভ সনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে বরিশাল সদরেই ৫৫৭ জনের করোনা সনাক্ত হয়েছে।
এদিকে করোনা মোকাবিলায় ফ্রন্ট লাইনে কাজ করা বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রায় ২ হাজার সদস্যর মধ্যে গতকাল সোমবার পর্যন্ত ১২৩ জন সদস্যর করোনা পজিটিভ। এর মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার, সহকারী পুলিশ কমিশনার, ৪ জন ইন্সপেক্টর, ১৮জন এসআই, ১৯ জন এএসআই ও নায়েক এবং কনেস্টবল রয়েছেন ৮০ জন।
ফলে আইন শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে বাকী সদস্যদের করোনা পরীক্ষা জরুরী হয়ে পড়লেও তাদের পরীক্ষা করানো যাচ্ছেনা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক পুলিশ সদস্য জানান, বিএমপি’র যে সকল সদস্যর করোনা পজিটিভ হয়েছে তাদের সংস্পর্শে অনেক পুলিশ সদস্য কাজ করেছেন। যাদের নমুনা সংগ্রহ করা খুবই জরুরী।
তারা আরো জানিয়েছেন, অনেকেই নমুনা দিতে গিয়ে ফিরে এসেছেন। ফলে তাদের মধ্যে অজানা আতংক বিরাজ করছে।
কেউ কেউ আবার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মাঠ পর্যায়ে আমরা যারা কাজ করি তাদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা না গেলে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।
এ ব্যাপারে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ শাহাবুদ্দিন খান (বিপিএম-বার) জানান, এ বিষয়টি দেখার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ রয়েছে, সিভিল সার্জন রয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের নমুনা সংগ্রহ বন্ধ থাকলেতো স্বাস্থ্য বিভাগ এর বিকল্প ব্যবস্থা করবে। এজন্যতো আর বসে থাকা যাবে না। স্বাস্থ্য বিভাগ সংশ্লিষ্ট যারা রয়েছেন তাদের মধ্যে সমন্বয় করে এ সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা নিতে হবে।
তিনি বলেন, আইন শৃঙ্খলা যদি ঠিক রাখতে হয় তাহলে পুলিশ সদস্যদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করে তাদের মনোবল ঠিক রাখতে হবে। যারা পজিটিভ হবেন তাদেরকে যদি চিহ্নিত করে আইসোলেশনে নিয়ে চিকিৎসা না দেয়া যায়, স্বাস্থ্য পরিসেবা না দেয়া যায় তাহলেতো অসন্তোষ তৈরী হতে পারে বলেন তিনি। এ বিষয়টি অনুধাবন করে স্বাস্থ্য বিভাগকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানান বিএমপি কমিশনার।
এ ব্যাপারে বরিশাল সিভিল সার্জন ডাঃ মনোয়ার হোসেন বলেন, সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ রয়েছে। তাদের উপর হস্তক্ষেপ করার এখতিয়ার নেই জানিয়ে তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের দুইজন টেকনিশিয়ানকে আমরা নমুনা সংগ্রহ করার প্রশিক্ষণ দিয়েছি। প্রয়োজনীয় সেটআপ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, দশটি উপজেলার মধ্যে মাত্র ৭জন টেকনিশিয়ান দিয়ে নমুনা সংগ্রহ করানো হচ্ছে।
কেউ যদি অসুস্থ হয় তার বিকল্প ব্যবস্থা করা দরকার। সিটি কর্পোরেশনে বিকল্প লোক তৈরী করা দরকার ছিল। সেটা না করায় একটি সমস্যা তৈরী হয়েছে। তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে জেনারেল হাসপাতাল ও শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল রয়েছে।
এর মধ্যে জেনারেল হাসপাতালে নমুনা সংগ্রহ কার্যক্রম চলছে। অবশ্য সেখানে প্রতিদিন ১৫/২০ জনের নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভব বলেন তিনি। শেবাচিম হাসপাতাল নমুনা সংগ্রহ করছে না জানিয়ে তিনি বলেন, এর দায়ভার আমার উপর চাপানো হচ্ছে। সিভিল সার্জন যদি কার্যক্রম চালু রাখতে পারে তবে শেবাচিম হাসপাতাল কেন পারবে না? এমন প্রশ্ন করে তিনি বলেন, শেবাচিমে শুধু ভর্তিকৃত রোগী ও তাদের স্টাফদের নমুনা সংগ্রহ করছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে মৌখিকভাবে তাকে বিষয়টি জানানো হলেও অফিসিয়ালভাবে তাকে এখনো অবহিত করা কিংবা কোন সহযোগিতা চাওয়া হয়নি। তিনি বলেন, এ সমস্যার কথা ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বরিশাল জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়েছে।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বিষয়টির সমাধানের চেষ্টা করছেন। তবে এ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে সাময়িকভাবে হলেও শেবাচিমে নমুনা সংগ্রহ বন্ধ না করে উন্মুক্ত রাখা দরকার।
বরিশাল জেলা প্রশাসক এস.এম অজিয়র রহমান বলেন, এ সমস্যা খুব দ্রুত সমাধান করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যাদের করোনা পজিটিভ আসছে দু-একটি তথ্য ভুল হতে পারে। তবে বেশিরভাগ সঠিক রিপোর্ট আসে বলেন তিনি। বরিশাল নগরসহ জেলায় করোনায় এ পর্যন্ত ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে বরিশাল স্বাস্থ্য বিভাগ।
Leave a Reply